ধর্ষণের শিকার কিশোরীর সন্তান জন্ম, সমাজচ্যুত পরিবার

ধর্ষণের শিকার কিশোরীর সন্তান জন্ম, সমাজচ্যুত পরিবার

ধর্ষণের শিকার হয়ে সন্তান জন্ম দেয়ায় কিশোরীর পরিবারকে সমাজচ্যুত করার অভিযোগ উঠেছে। গত ১৯ ফেব্রুয়ারি এক সালিশ বৈঠকে তার পরিবারকে সমাজচ্যুত করার সিদ্ধান্ত নেন স্থানীয় মাতব্বররা। তবে ধর্ষণের বিচার না করে উল্টো কিশোরীর পরিবারকে সমাজচ্যুত করায় ক্ষোভ ও অসন্তোষ বিরাজ করছে সচেতন মহলে।

এমনই ঘটনা ঘটেছে ফেনীর ফুলগাজীতে। এদিকে, এ ঘটনায় ২৬ ফেব্রুয়ারি ভুক্তভোগী কিশোরীর পরিবারের করা ধর্ষণ মামলায় অভিযুক্ত পুলিশ কনস্টেবল তৌহিদুল ইসলাম শাওনকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

ভুক্তভোগী কিশোরীর পরিবারের অভিযোগ, পুলিশ কনস্টেবল শাওন বছরখানেক আগে নবম শ্রেণি পড়ুয়া ছাত্রীর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলেন। একদিন ঘুরে বেড়ানোর নাম করে তাকে ফেনী শহরের একটি বাসায় নিয়ে যান শাওন। ফলের জুসের সঙ্গে চেতনানাশক ওষুধ মিশিয়ে মেয়েটিকে পান করান। অচেতন হয়ে পড়লে তাকে ধর্ষণ করে ভিডিও ধারণ করেন শাওন।

১২ ফেব্রুয়ারি ধর্ষণে শিকার ওই কিশোরী একটি সন্তান প্রসব করলে বিষয়টি জানাজানি হয়ে যায়। কিশোরীর স্বজনরা পুলিশ সদস্যের পরিবারের কাছে বিয়ের প্রস্তাব দিলেও তারা এড়িয়ে যায়। এদিকে স্থানীয় মাতব্বররা বিষয়টি জানতে পেরে ১৯ ফেব্রুয়ারি রাতে বৈঠকে বসেন। সেখানে কিশোরীর পরিবারকে সমাজচ্যুত করার সিদ্ধান্ত নেন তারা।

এদিকে, কোনো প্রতিকার না পেয়ে একঘরে হয়ে ২৬ ফেব্রুয়ারি পুলিশ কনস্টেবল তৌহিদুল ইসলাম শাওনের নামে ধর্ষণ মামলা করে ভুক্তভোগীর পরিবার। ওই কিশোরীর ২২ ধারা জবানবন্দি নিয়ে আদালতের জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কামরুল হাসান শাওনকে গ্রেপ্তারের নির্দেশ দেন। এক পর্যায়ে শাওনের বর্তমান কর্মস্থল রাঙামাটি থেকে তাকে আটক করে কারাগারে পাঠানো হয়।

কিশোরীর পরিবারকে সমাজচ্যুত করার বিষয়ে স্থানীয় মাতব্বর কামরুল মাস্টার বলেন, ওই কিশোরীর বিয়ে হয়নি। অবৈধ সম্পর্কের কারণে সে বাচ্চা জন্ম দিয়েছে। এটি সমাজের জন্য লজ্জাকর।

এ জন্য ১৯ ফেব্রুয়ারি সামাজিক বৈঠকে তাদেরকে সমাজচ্যুত করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এটি আমার একক সিদ্ধান্ত নয়। এ সিদ্ধান্তে সমাজের সবাই একমত প্রকাশ করেছে।

ভুক্তভোগী কিশোরীর বাবা অভিযোগ, সমাজচ্যুত করায় এলাকার কেউ আমাদের সঙ্গে কথা বলছে না। এলাকার মাতব্বরদের ভয়ে স্বজনরাও আমাদের এড়িয়ে চলছে। ধর্ষকের বিচার না করে সবাই আমার এবং আমার পরিবারের বিচার শুরু করে দিয়েছে। আমরা এখন অমানবিক জীবন-যাপন করছি।

ফুলগাজী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) কুতুব উদ্দিন বলেন, সমাজচ্যুতর বিষয়টি আমি শুনিনি। বিষয়টি সত্য হলে মাতব্বরসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

আপনি আরও পড়তে পারেন